এম পক্স (Mpox), যা আগে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত ছিল, একটি বিরল কিন্তু সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ যা মূলত পশুদের থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। সাম্প্রতিককালে এই ভাইরাসটি এশিয়া, ইউরোপ, এবং আমেরিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তারা এই রোগে সহজেই আক্রান্ত হতে পারেন এবং তাদের জন্য এর ফলাফল মারাত্মক হতে পারে।
এম পক্সের লক্ষণসমূহ
এম পক্সের সংক্রমণের লক্ষণগুলো সাধারণত ফ্লুর মতো শুরু হয় এবং এর সাথে থাকে ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- জ্বর
- মাথাব্যথা
- পেশি ও জয়েন্টে ব্যথা
- ক্লান্তি
- গলায় ব্যথা
- ফুসকুড়ি, যা পরে ঘাঁয়ে রূপ নেয়
এই লক্ষণগুলো সংক্রমণের পর ৭-২১ দিনের মধ্যে দেখা দিতে পারে। ফুসকুড়ি মুখ, হাত, পা, এবং শরীরের অন্যান্য অংশে দেখা যায়।
এম পক্স থেকে বাঁচার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
এম পক্সের মতো সংক্রামক রোগ থেকে বাঁচতে নিচের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন:
১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এম পক্স থেকে সুরক্ষিত থাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:
- নিয়মিত হাত ধোয়া: ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া উচিত। হাত ধোয়া সম্ভব না হলে অ্যালকোহল-ভিত্তিক স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
- মাস্ক পরা: জনবহুল স্থানে গেলে মাস্ক পরা জরুরি, বিশেষত যখন ভাইরাসটি দ্রুত ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।
- ব্যক্তিগত দূরত্ব বজায় রাখা: সংক্রমিত ব্যক্তির কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। এছাড়া, জনবহুল স্থানে যাওয়া এড়িয়ে চলুন।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: ঘর এবং আশপাশ পরিষ্কার রাখা এবং জীবাণুনাশক ব্যবহার করা ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
২. টিকা গ্রহণ
টিকা এম পক্স প্রতিরোধে অন্যতম কার্যকরী উপায়। মাঙ্কিপক্সের জন্য উন্নত কিছু টিকা আছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আপনার এলাকায় টিকা পাওয়া যায় কিনা, তা জানতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য টিকা: যদি আপনি কোনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকেন (যেমন স্বাস্থ্যকর্মী, বয়স্ক ব্যক্তি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল), তবে টিকা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান
শরীরের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এম পক্স সহ অন্যান্য রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এর জন্য:
- স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ: ভিটামিন, মিনারেল এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। যেমন শাক-সবজি, ফলমূল, বাদাম, মাছ এবং দুধ।
- নিয়মিত ব্যায়াম: দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক ব্যায়াম করলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হয়।
- পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিরাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করলে শরীর নিজেকে পুনরুদ্ধার করে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়।
- জলপান: প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং বিভিন্ন টক্সিন বের হয়ে যায়, যা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৪. প্রাকৃতিক সমাধান ব্যবহার করুন
প্রাকৃতিক উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে রয়েছে:
- মধু: প্রাকৃতিক মধুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। মধু প্রতিদিন এক চামচ করে খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
- কালোজিরা: কালোজিরাতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
- আদা: আদা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পরিচিত, বিশেষত শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে।
- তুলসী পাতা: তুলসী পাতার চা পান করলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং রোগের ঝুঁকি কমে।
৫. সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষা করুন
এম পক্সের মতো রোগে আক্রান্ত হলে প্রাথমিকভাবে লক্ষণ চিহ্নিত করে পরীক্ষা করানো গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো লক্ষণ দেখা দেয় (যেমন জ্বর, ফুসকুড়ি), দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান।
- স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ: দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ এবং চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
- আইসোলেশন মেনে চলা: যদি এম পক্স ধরা পড়ে, তবে নিজেকে আইসোলেট করে রাখুন যাতে ভাইরাস অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে।
সর্বোপরি
এম পক্সের মতো ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে হলে সচেতনতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণই হলো মূল চাবিকাঠি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, টিকা গ্রহণ, প্রাকৃতিক সমাধান ব্যবহার করা এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোই আপনাকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে।
সুস্থ থাকুন, সচেতন থাকুন, এবং আপনার পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন।